April 18, 2025, 10:10 pm
শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ
গণমাধ্যমে কাজ করা মানে কেবল খবর সংগ্রহ বা প্রকাশের দায়িত্ব পালন নয়, বরং একে একটি দায়িত্বশীলতা হিসেবে দেখা উচিত। সংবাদপত্রের একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে সমাজের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া, যাতে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। কিন্তু একথাও সত্য, যে অনেক সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাঁধনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি, সেই সত্যের অনুসন্ধান ও প্রকাশের ফলে শত্রুতারও সৃষ্টি হয়।
নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, সংবাদ পরিবেশন এক কঠিন কাজ। কারণ অনেক সময় সত্য প্রকাশের জন্য এমন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখনই আপনি সত্য প্রকাশ করবেন, তখন কিছু মানুষের পছন্দের বাইরে চলে যাবেন। আর তাতে তারা অপ্রস্তুত হয়ে প্রতিশোধ নিতে দ্বিধা করবে না।
পেশাগত জীবনে আমি এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে কোনও সংবাদ প্রকাশ করার পর অনেকেই আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছেন। তারা তখন আমাকে শত্রু হিসেবে দেখেছেন। যদিও আমার কখনোই উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে আঘাত করা, বরং ছিল সত্য ও সঠিক সংবাদ সমাজের কাছে তুলে ধরা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একসময় এমনটি ঘটে—যখন আপনার পেশাগত কাজের জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিপর্যয় ঘটে।
এটি অবশ্যই ভাবনার বিষয়। আমাদের সমাজে সাংবাদিকতা এখনও অনেক সময় ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ কিংবা ‘শত্রুতা’ হিসেবে দেখা হয়। অথচ সাংবাদিকদের কাজ হলো শুধু সংবাদ তুলে ধরা, একটি নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর হয়ে উঠা, যা সমাজের সত্যতা তুলে ধরে।
এই পথের অনেক বাধা থাকলেও, একমাত্র সত্য প্রকাশের মধ্য দিয়েই একটি গণতান্ত্রিক সমাজ শুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। সাংবাদিকদের জন্য কখনও কখনও সত্যের পথে হাঁটতে গিয়ে শত্রু তৈরি হতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা ভুল করছে। বরং, সেটা তাদের একান্ত দায়িত্ব ও নৈতিক অবস্থান। সত্য কখনও সহজ নয়, কিন্তু একে প্রকাশ করার সাহস আমাদের সকলের ভেতর থাকা উচিত।
তবে এমন একটি সময়ে আমাদের দাঁড়ানো উচিত, যেখানে পেশাগত সংবাদ প্রকাশকে একটি দায়বদ্ধতা হিসেবে নেওয়া হবে, এবং ব্যক্তি-বিরোধ নয়, বরং সমাজের কল্যাণে সত্যের প্রতি যে অনুগততা, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।